আশুলিয়া প্রতিদিন, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ভূমি সংস্কার বোর্ডের দূর্ণীতিতে সাধারণ লীজিদের বেহাল দশা ; এ যেন এক পরিকল্পিত নকশা। ভূমি সংস্কার বোর্ডের চার কর্মকর্তার নীল নকশায় চলছে নবাব এস্টেট তথা সরকারি জমির ডিসিআর বাণিজ্য।
অভিযোগ রয়েছে সরকারি জমির বৈধ লীজি সদস্যদের বাদ দিয়ে দখলবাজ ভূমিদস্যুদের দিয়ে ৫ শতাংশের প্লট করে প্লট প্রতি মোটা অংকের টাকায় বিক্রি বানিজ্য করছে একটি চক্র। বেহাত হচ্ছে সরকারী সম্পত্তি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধান চলাকালীন সময়ে আমাদের হাতে আসে এক চাঞ্চল্যকর ভিডিও, যেখানে দেখা যায় ভূমি সংস্কার বোর্ডস্থ নবাব এস্টেটের উর্দ্ধতন এক কর্মকর্তা ডিসিআর দেয়ার নামে সরাসরি অর্থিক লেনদেন করছে।
জানা যায় উক্ত কর্মকর্তার নাম আমিনুল ইসলাম, তিনি ভূমি সংস্কার বোর্ডস্থ নবাব এস্টেটের সহকারী ম্যানাজার প্রশাসন ছাড়াও হিসাব শাখার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
নিয়ম অনুযায়ী এই প্রতিষ্ঠানে সরাসরি কোন আর্থিক লেনদেন করার কথা নয়, যা নিয়ম বহির্ভূত এবং এরূপ লেনদেন হবার কথা ব্যাকিং হিসাব নম্বরের সুনির্দিষ্ট চেক ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে । এমনটিই বলছেন প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার মোঃ হোসেন।
অনুসন্ধানে আরো গভীরে প্রবেশ করলে জানা যায়, আশুলিয়ার আউকপাড়া এলাকায় লীজের মাধ্যমে নবাব এস্টেটের ব্যবস্থাপনায় থাকা সরকারি জমি লীজি সদস্যদের বাদ দিয়ে প্লট আকারে বন্টন করে নবাব এস্টেটের চার ম্যনাজারের সিন্ডকেট প্রতি শতাংশ জমি এক থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করছে।
যেখানে নবায়ন ভিত্তিক বাৎসরিক একসনা লীজের জমিতে টিনশেড ঘর করার কথা থাকলেও অবৈধ দখলদাররা ছাঁদ দিয়ে অবাধেই গড়ে তুলছেন স্থায়ী দোকান পাটসহ বহুতল ভবন।
এ ব্যপারে ভূমি সংস্কার বোর্ডের তদারকি করার কথা থাকলেও কোন এক অজানা কারনে চুপ রয়েছেন তারা।
ভূক্তভোগীদের আবেদন নিবদনে বহু তদন্ত কমিটি গঠন হলেও ন্যায় বিচারের পথ অবরুদ্ধ। বেশিরভাগ আবেদনই অদৃশ্য হাতের ইশারায় হয়ে যা হয়ে যায় নথিজাত।
কাগজ পত্র পর্যালোচনায় জানা যায়, ন্যাশনাল প্লাজা বহুমুখী সমবায় সমিতির সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত সভাপতি মোঃ মজিবুল্লাহ নাসের। উক্ত সমিতির সমবায় রেজিস্ট্রেশন নং ০০৪৪১। ২০০৫ সালে সমিতির সাধারণ সদস্যদের পক্ষে তৎকালীন সহ-সভাপতি আইয়ুব আলী শিকদার এর লীজ আবেদনের ভিত্তিতে উক্ত জমি লীজ বরাদ্ধ পান ন্যাশনাল প্লাজা বহুমুখী সমবয় সমিতি।
পরবর্তীতে নানা দুর্নীতির দায়ে আইয়ুব আলী শিকদারকে সমিতির সাধারন সভার সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে সমিতির সকল কার্যক্রম থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়।
বর্তমানে আইয়ুব আলী শিকদার উক্ত সমিতির সদস্যদের নামে লীজকৃত সম্পত্তির একক লীজ মালিকানা দাবি করে ভূমি সংস্কার বোর্ডের অসাধু চার ম্যানাজারসহ অনেকেরই সাথে সখ্যতা গড়ে সিন্ডকেট পন্থায় বৈধ লীজিদের বঞ্চিত করে উক্ত জমি লাখ লাখ টাকায় বিক্রি করে ভাগ বাটায়ারায় তারা আজ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। এসব জমি বিক্রি করতে তিনি ব্যবহার করছেন একটি দালাল চক্র।
আইয়ুব আলী শিকদার যদি লীজ সূত্রে এই সম্পত্তির একক মালিক হয় তাহলে ন্যাশনাল প্লাজা বহুমুখী সমিতির রেজিস্ট্রেশন নাম্বার তিনি ব্যবহার করছেন কেন? আর ভূমি সংস্কার বোর্ড তাকে সভাপতি কিংবা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মানেনই বা কিভাবে?এখানে প্রশ্ন থেকে যায়।
ভূমি সংস্কার বোর্ডের কারসাজিতে ন্যাশনাল প্লাজা বহুমুখী সমাবয় সমিতির সভাপতি সম্পাদকসহ সকল সদস্যের বাদ দিয়েই বহিষ্কৃত আইয়ুব আলী শিকদারের মাধ্যমে চালাছে ডিসিআর বাণিজ্য।
আর এই আইয়ুব আলী সিকদারের সাথে জড়িত থাকায় ন্যাশনাল প্লাজা বহুমুখী সমবয় সমিতির সভাপতি সহ কাউকে পাত্তা দিচ্ছেন না ভূমি সংস্কার বোর্ডের এই চার কর্মকর্তা।
এ সকল দালাল চক্রের মধ্যে রয়েছেন মোঃ হোসেন, ম্যানেজার, ঢাকা নবাব এস্টেট, সাব্বির হোসেন, সিনিয়র সহকারী ম্যানেজার, মোঃ ইয়াছির আরাফাত সহকারি ম্যানেজার সম্পত্তি।
মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম সহকারি ম্যানেজার প্রশাসন এবং সমন্বয়কারী দালাল খোকন, আব্দুস সালাম ভুঁয়া মুক্তিযোদ্ধা, কামাল মাস্টার ওরফে কাটিং মাস্টার, আলাল উদ্দিন, জামাই হালিম, মজিবুর রহমান বিষাসহ অনেকে।
এছাড়া ভূমি সংস্কার বোর্ডের কর্মকর্তা সহ দালাল চক্র সরকারি সম্পদ লীজি মালিকদের বুঝিয়ে না দিয়ে ভূমিদস্যুদের কাছে প্লট আকারে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় এদের অনেকের বিরুদ্ধেই দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলা চলমান।
অথচ দূর্নীতির বিষয়ে কোন তদারকি না থাকায় কাউকে তোয়াক্কা করছেন না তারা হয়ে উঠছেন আরো বেপরোয়া আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে উক্ত জমি বিক্রি করার চলছে মহাউৎসব। যাহা দেখার কেউ নেই।
আবার লীজকৃত সম্পত্তির মধ্যে এক একর সম্পত্তি রাখা হয়েছে ভূমি সংস্কার বোর্ডের জন্য, এখানে ভূমি সংস্কার বোর্ড এই এক একর সম্পত্তি দিয়ে কি করবেন এখানে? এটাও দেখার বিষয়? জানা যায় এই জমি বিক্রির জন্য তারা একটা দালাল চক্র তৈরি করেছেন।
সরকারী জমি দখল-পাল্টা দখল- আর অবৈধ আর্থিক লেনদেনের চলছে মহাউৎসব। সেখানে লীজ সূত্রে মালিক হয়েও অসহায় ভূমিহীন সদস্যরা পাচ্ছেন না তাদের কাঙ্খিত জমি।
যেখানে ডিসিআর বাবদ সরকারি ফি ৪৫ হাজার ৫০৪ টাকা সেখানে বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নামে নেওয়া হচ্ছে প্রায় এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা।
এখানেই শেষ নয় শতাংশ প্রতি ২০/৩০ হাজার টাকা প্রশাসন ম্যানেজ করার নামে দাবী করছেন আশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন মাতব্বর।
এতে অসহায় হয়ে ক্ষুব্ধ সাধারণ বৈধ লীজি সদস্যসহ ন্যাশনাল প্লাজা বহুমুখী সমবায় সমিতির নেতৃবৃন্দ।
তবে এবিষয়ে শাহাবুদ্দিন মাদবর চেয়ারম্যান আশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদকে জানতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উক্ত বিষয়ে মোঃ আব্দুস সবুর চেয়ারম্যান ভূমি সংস্কার বোর্ড এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তা সম্ভব হয়নি।
তবে এ সমস্যার সমাধানসহ অবৈধ ডিসিআর বাতিলের লক্ষ্যে কাজ করবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ এমনটাই দাবী সাধারণ সদস্যদের। অনুসন্ধান চলছে
Leave a Reply