যুদ্ধের ময়দান থেকে শুরু করে বন্ধুত্ব, প্রেম কিংবা দাফতরিক কাজ, কোথায় ছিল না চিঠি? কিন্তু আজ সেই চিঠি যেন হারিয়েই গেল। চিঠির আবেদন যুগে যুগে এতটাই ছিল যে, নানা ঘটনাপ্রবাহ প্রবাহিত হয়েছে চিঠির কারণেই। এমনকি বিশ্ব ইতিহাস পরিবর্তনের সরব সাক্ষী হয়ে আছে চিঠি। ইতিহাসের যে চিঠিগুলো নিছকই কথামালা নয়, যেগুলোর প্রভাব এখনো ব্যাপকভাবে বিদ্যমান।
এমনই কিছু বিখ্যাত চিঠি সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক; বলতে পারেন এগুলো ইতিহাসের সেরা পাঁচ চিঠি-
শিক্ষকের কাছে পিতার চিঠি
ঐতিহাসিক গেটিসবার্গের ভাষণ দেওয়া শব্দের জাদুকর প্রথম মার্কিন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ১৮৬১ হতে ১৮৬৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকাকালে তার পুত্রের স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে একটি চিঠি লিখেছিলেন। এই চিঠিটি ঐতিহাসিক এক চিঠি হিসেবে স্থান তো পেয়েছেই, সেই সাথে বিশ্বের শিক্ষক, পিতা ও সন্তানদের নৈতিক মূল্যবোধের জায়গাটি কেমন হওয়া উচিত তা বিশেষভাবে তুলে ধরেছেন।
লেটার ফ্রম বার্মিংহাম জেল (১৯৬৩)
বিচ্ছিন্নতা ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে অহিংস প্রতিবাদের পক্ষে এক খোলা চিঠি লিখেছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। এটিই Letter from Birmingham Jail নামে পরিচিত। এই চিঠিতে তিনি বলেন যে, আদালতের ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় চিরকাল অপেক্ষা করার থেকে অন্যায় আইন ভঙ্গ করা ও তার বিরুদ্ধে সরাসরি পদক্ষেপ নেওয়া জনগণের নৈতিক দায়িত্ব। তিনি এই চিঠিতে আরো বলেছেন যে, যেকোনো জায়গায় সংঘটিত অন্যায় সর্বত্র ন্যায়বিচারের জন্য হুমকিস্বরূপ।
আজও কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র যেভাবে অমর হয়ে আছেন, অমর হয়ে আছে তার লেখা এই চিঠিটিও।
রুজভেল্টকে আইনস্টাইনের চিঠি (১৯৩৯)
এই চিঠিটি আইনস্টাইন-সিলার্ড চিঠি নামেও পরিচিত। জানা যায়, হাঙ্গেরিয়ান অভিবাসী লিও সিলার্ড, ইউজিন উইগনার এবং এডওয়ার্ড টেলার আইনস্টাইনকে প্ররোচিত করেন জার্মানির পারমাণবিক বোমা তৈরির সম্ভাবনা সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টকে সতর্ক করতে।
এই চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রকেও পারমাণবিক শক্তি সম্পর্কে সচেতন হওয়ার অনুরোধ করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসাত্মক ম্যানহাটন প্রজেক্টের অন্যতম প্রধান এক নিয়ামক হিসেবে কাজ করে এই চিঠিটি।
বেলফোর ঘোষণা (১৯১৭)
ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র স্থাপনের লক্ষ্যে যুক্তরাজ্যের ইহুদি কমিউনিটির নেতা লিওনেল ওয়াল্টার রথসচাইল্ডসহ তৎকালীন নেতারা ইউরোপের অনেক দেশে প্রচারণা চালান। বহু কূটনৈতিক কাটাছেঁড়ার পর ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার বেলফোর এই দাবিকে সমর্থন জানিয়ে রথসচাইল্ডের কাছে একটি চিঠি লেখেন এবং এই চিঠিটি যুক্তরাজ্যের জায়নিস্ট ফেডারেশনের কাছে পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানান। এই চিঠিটিই ‘বেলফোর ডিক্লেয়ারেশন’ বা ‘বেলফোর ঘোষণা’ হিসেবে পরিচিত। ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে ইউরোপের এই হস্তক্ষেপ পালটে দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের মানুষের ভাগ্য।
সুলিভান বল্যুর চিঠি (১৮৬১)
আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় ইউনিয়ন আর্মি সুলিভান বল্যু তার স্ত্রী সারার কাছে একটি চিঠি লেখেন। এই হৃদয়গ্রাহী চিঠিতে গৃহযুদ্ধের প্রাক্কালে তিনি যে আবেগগুলি অনুভব করছিলেন, তার এক মিশ্র প্রতিফলন ঘটে। উদ্বেগ, ভয়, অপরাধবোধ, দুঃখ, একই সাথে সন্তানদের প্রতি তার অবিরাম ভালোবাসা ও সর্বোপরি জাতির প্রতি তার কর্তব্যবোধের উল্লেখ ছিল এই চিঠিতে।
চিঠি একটি দলিলের মতো। আবেগের লিখিত রূপ চিঠি। সংশয়ে আহ্বান, সংঘর্ষে শান্তির ডাক, বৈশ্বিক সম্পর্ক রক্ষা, প্রিয় বন্ধুর অভিমান ভাঙানো, একটি চিঠি হতে পারে সকল মুশকিলের আসান। প্রযুক্তির উন্নতিকে সাধুবাদ। তবুও আটপৌরে বাঙালির অনুরোধ,”চিঠি দিয়ো প্রতিদিন, চিঠি দিয়ো”।
Leave a Reply