ভারতের উত্তর প্রদেশের দাদরিতে সম্প্রতি মুহাম্মদ আখলাখ নামে এক মুসলিমকে পিটিয়ে মারা হয়েছিল গরুর মাংস খাওয়ার সন্দেহে। গত বছর গরু পাচার করার অভিযোগে হরিয়ানায় একটি গাড়ির মধ্যে দুই মুসলিম যুবককে পুড়িয়ে মারা হয়। এবার গরুর মাংস খাওয়ার সন্দেহে হরিয়ানায় সাবির মালিক নামে আরো এক মুসলিম যুবককে পিটিয়ে মারা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) রাজ্যের চরখি দাদরি জেলায় ভান্ধারা গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে এ খবর প্রকাশ করা হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের খবরে বলা হয়েছে, সাবিরকে তার ভাড়া বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় গোরক্ষা কমিটির সদস্যরা। তারপর তাকে পিটিয়ে মারা হয়। এরপর তাকে একটি খালের ধারে ফেলে দেয়া হয়। সেখান থেকে তার লাশ উদ্ধার হয় বলে জানিয়েছে পরিবারের।
বছর তেইশের যুবক সাবির মল্লিকের বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বাসন্তীতে। এলাকায় কাজ না পেয়ে এখন থেকে তিন বছর আগে শ্যালক সুজাউদ্দিন ও স্থানীয় আরো কয়েকজন যুবককে নিয়ে হরিয়ানায় যান তিনি। সুজাউদ্দিনকে নিয়ে বাড্ডা থানায় এলাকায় থাকতেন তিনি। ভালো কোনো কাজ না পাওয়ায় করতেন কাগজ কুড়নোর কাজ।
পুলিশের বরাতে সংবাদমাধ্যম জি নিউজের খবরে বলা হয়েছে, কয়েকজন লোক সাবিরকে প্লাস্টিকের বোতল বিক্রি করবে বলে ডেকে আনে। তারপরই তাকে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। মারধর দেখে স্থানীয়রা চলে আসেন। তখন সাবিরকে অভিযুক্তরা অন্য জায়গায় নিয়ে চলে যায়। সেখানে আরেক দফা মারধর করে। ফলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
সাবিরের শ্যালক সুজাউদ্দিন বলেছেন, আমরা যে এলাকায় থাকতাম সে এলাকায় গোমাংস নিষিদ্ধ ছিল। তাই আমরা গোমাংস খেতাম না। আমাদের নামে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছে।
এই ঘটনায় থানায় একটি এফআইআর করা হয়েছে। দুই কিশোরসহ মোট ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিযুক্তদের নাম অভিষেক, মোহিত, রণবীর, কমলজিত ও সাহিল বলে জানা গেছে।
এফআইআরের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম এবিপি আনন্দ জানিয়েছে, গত ২৭ আগস্ট সকালে একদল যুবক ভান্ধারা গ্রামের কাছে একটি বস্তিতে আসেন। সেখান থেকে সাবিরকে ধরে স্থানীয় একটি বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে যায় তারা।
সাবিরের সঙ্গে আসিরুদ্দিন নামে আরেকজনকেও ধরে বাসস্ট্যান্ডে ডেকে নিয়ে যায় তারা। আসিরুদ্দিন আসামের বাসিন্দা। বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে দুজনকেই মারধর করা হয়।
পথচারীরা বাধা দিলে তাদেরকে মোটরসাইকেলে করে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। সাবিরকে একটি খালের কাছে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। আসিরুদ্দিনকে অন্য জায়গায় ফেলে দেয়া হয়েছিল। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়।
সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, সাবিরের শ্যালক সুজাউদ্দিন সর্দারকেও থানায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে অবশ্য তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। গত মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে বলে দাবি করেছেন পরিবারের সদস্যরা।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে সুজাউদ্দিন সাবিরের মৃতদেহ নিয়ে বাসন্তীর বল্লারটপ গ্রামে ফেরেন। এই ঘটনায় এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন মৃতের পরিবারের সদস্যরা।
এদিকে গরুর মাংস বহনের সন্দেহে মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলায় ট্রেনে যাত্রীদের হাতে এক মুসলিম বৃদ্ধের লাঞ্ছিত হওয়ার একটি ভিডিও শনিবার (৩১ আগস্ট) সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ঘটনাটি তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। বিদ্বেষ ও আক্রমণের শিকার ওই বৃদ্ধের নাম হাজি আশরাফ মুনইয়ার বলে খবরে জানানো হয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, ধুলে এক্সপ্রেসে ঘটা এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের সাংসদ ইমতিয়াজ জলিল। তিনি গোরক্ষা বাহিনীর দিকে নজর দেয়ার জন্য সরকার ও পুলিশের আহ্বান জানান।
নাসিকের জলগাঁও জেলার বাসিন্দা হাজি আশরাফ মুনইয়ার তার মেয়ের বাড়িতে যাওয়ার সময় এই ন্যাক্কারজনক হামলার শিকার হন। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ডজন খানেক মারমুখীর যুবক বৃদ্ধ লোকটিকে লাঞ্ছিত করছে এবং তাকে গালিগালাজ করছে।
ভারতজুড়ে এমন ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটে চলেছে। গত ১৯ জুন উত্তর প্রদেশে ব্যাগে করে গরুর মাংস নিয়ে যাওয়ার সন্দেহে এক উগ্রবাদী সংগঠনের সদস্যরা এক রিকশা চালকের ওপর হামলা চালায়।
Leave a Reply