নজরুল ইসলাম মানিক, ঃ শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় কয়েকজন শ্রমিককে গুম হওয়ার ঘটনা, বেতন ভাতা পরিশোধ করার আশ^াস দিয়ে কারখানা বন্ধ করে দেয়া ও বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংগে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় কাউসার হোসেন খান (২৭) নামে এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন অর্ধশত। তাদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ রাখায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নবীনগর-চন্দ্রা ও বাইপাইল-আব্দল্লাহপুর মহাসড়ক যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে হাজার হাজার যানবাহন আটকে পড়ায় লক্ষ লক্ষ যাত্রী সাধারণ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
শ্রমিক সুত্রে জানা যায়, সোমবার সকালে মন্ডল গ্রুপের শ্রমিকদের সাথে মালিকপক্ষ, শ্রমিক প্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে ত্রী-পক্ষীয় মিটিং চলছিল। এসময় সমঝোতা না হওয়ায় শ্রমিকরা কারখানার বাইরে অবস্থান নেয়। এ সময় ন্যাচারাল ও ম্যাংগো টেক্স পোশাক কারখানার শ্রমিকরা মণ্ডলের শ্রমিকদের সঙ্গে বিক্ষোভে অংশ নেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ তিনটি পোশাক কারখানার কয়েক শতাধিক শ্রমিকরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে এবং পুলিশ সেনাবাহিনী ও র্যাবের কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা লাঠিচার্জ শুরু করলে শ্রমিকরা আরও উত্তেজিত হয় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে গুলি চালায় যৌথ বাহিনী। এতে দুইজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয় তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় পিএমকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাঠিচার্জে অর্ধশত শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে আরোও চারজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে। পরে সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার ইউসুফ আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নিহত কাউসার হোসেন খান ম্যাংগো টেক্স লিমিটেড পোশাক কারখানার শ্রমিক বলে জানা যায়। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধরা হলেন নয়ন, রাসেল, নাজমুল ও ওবায়দুল মোল্লা। শ্রমিক আন্দোলনের কারনে রিপোর্ট লেখা পর্য়ন্ত সকাল থেকেই নবীগর- চন্দা মহাসড়কে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তির শিকার হয় যানবাহন চালক ও যাত্রীরা। জানা যায় আশুলিয়ার বার্ডস গ্রুপ কর্তৃপক্ষ এক মাসের মধ্যে বেতন ভাতা পরিশোধ করবে বলে বন্ধ করে দেয় কারখানা। এরপর সোমবার সকালে শ্রমিকদের বেতন না দিয়ে কারখানার গেইটে তিন মাস বন্ধের নোটিশ দেওয়ায় বিক্ষোভ করেন ওই কারখানার শ্রমিকরা
এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার ইউসুফ আলী বলেন, কাউসার হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। এ ছাড়াও গুলিবিদ্ধ চারজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক এনামুল হক মিয়া বলেন, একজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। তার তলপেটে গুলিবিদ্ধ ছিল। এ ছাড়াও নয়ন নামে একজনের বুকের ডান পাশে গুলি লেগে বের হয়ে যায় ও রাসেলের পেটেও গুলি লেগে বের হয়ে গিয়েছে। নয়ন ও রাসেলের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান ওই চিকিৎসক।
ন্যাচরাল ডেনিম কারখানার এইচআর অ্যাডমিন সবুজ হাওলাদার বলেন, আমাদের কারখানায় কোন সমস্যা ছিলো না। সকাল থেকেই শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণ ভাবে কাজ করছিলো। হঠাৎ শ্রমিকদের কাছে গুজব আসে, পাশের মন্ডল গার্মেন্টসের শ্রমিক মারা গেছে। এটা শুনেই সব শ্রমিক একসাথে কারখানা থেকে বেরিয়ে মন্ডল গার্মেন্টসের সামনে চলে যায়। পরে ওখানে কি ঘটেছে আমার জানা নেই। এছাড়া ও আশুলিয়ায় বকেয়া বেতনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলমের সঙ্গে মুটোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন যৌথবাহিনী। যেকোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, সেনাবাহিনী। শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ রাখায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নবীনগর-চন্দ্রা ও বাইপাইল-আব্দল্লাহপুর মহাসড়ক যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে হাজার হাজার যানবাহন আটকে পড়ায় লক্ষ লক্ষ যাত্রী সাধারণ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
প্রসঙ্গত, সোমবার সকাল ১০টার দিকে নবীনগর চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল ও ডিওএইচএস পয়েন্টে সড়কঅবরোধ করেন ডংলিয়ংন ও বার্ডস গ্রুপের কয়েকশ পোশাক শ্রমিক।
উল্লেখ থাকে, অন্যদিকে ১৮৬৩ কারখানার মধ্যে আজ ১৮টি কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে শ্রম আইনের ১৩ এর ১ এ ১১টি ও সাধারণ ছুটিতে ৭টি কারখানা বন্ধ রয়েছে। বাকি কারখানাগুলোয় শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছে।
Leave a Reply