সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি : আশুলিয়া সার্কেল ভুমি অফিসে গ্রাহকরা দিনে পর দিন ঘুরছে আর বলছে অনেকের নামজারী অনুমোদন হচ্ছে গোপনে, আমাদের নামজারী হচ্ছেনা না বলে নানা অভিযোগ উঠেছে। উৎকোচ ছাড়া কোন নামজারী হচ্ছেনা চলছে শুধু অযুহাত। কিন্তু প্রায় ৬৩ দিন ধরে কার্যত বন্ধ রয়েছে ভূমিসেবা কার্যক্রম ভুমি অফিস গুলোর। বিভিন্ন অযুহাতে মন্তব্য কওে বলেন কর্মকর্তারা সফটওয়্যার আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে পাঁচটি ভূমিসেবাকে একত্র করেছে সরকার। নতুন প্রক্রিয়ায় গ্রাহকদের ভোগান্তি কমবে বলে দাবি করেছিল ভূমি মন্ত্রণালয়। নতুন সফটওয়্যারের ধীরগতি ও গ্রাহকসেবার বিভিন্ন সুবিধা যুক্ত না থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও নামজারি ও খাজনা দিতে পারছেন না ভূমি মালিকরা। ফলে বর্তমান সরকারের দুর্নাম ছুটে চলেছে।
ভুমি অফিসের কর্তারা জানায়, লগইন আইডি না পাওয়ায় ভূমি ও ফ্ল্যাট ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোও নামজারি ও খাজনা দিতে পারছে না। কার্যত নতুন সফটওয়্যারের কারণে ভূমি ও ফ্ল্যাট ব্যবসায় ধস নেমেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রকল্প পরিচালকের অদক্ষতায় পাইলট প্রজেক্ট ছাড়াই ভূমিসেবা সফটওয়্যার আপগ্রেডেশন হওয়ায় ভোগান্তি শুরু হয়েছে। এতে সরকার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
আশুলিয়া সার্কেল ভুমি অফিস সুত্রে জানা গেছে, গত ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১ ডিসেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত ই-মিউটেশন সিস্টেম, ই-পরচা সিস্টেম এবং ভূমি উন্নয়ন কর সিস্টেম বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়। ১ ডিসেম্বর থেকে এই সেবা পুনরায় চালু করা হবে বলে জানানো হয়। তবে পাঁচ দিন সেবাগুলো বন্ধ থাকার কথা বলা হলেও ৬৩ দিনেও পূর্ণাঙ্গ সচল হয়নি ভূমিসেবা।
ভূমিসেবা গ্রহণেচ্ছুদের অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৮ থেকে ১২ জানুয়ারি রাজধানীসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেছেন একটি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। অনুসন্ধানে নতুন সফটওয়্যারের নানা জটিলতার তথ্য উঠে এসেছে।
জানা যায়, নতুন সফটওয়্যারে নামজারির ক্ষেত্রে ‘এসি ল্যান্ড’ নামের অপশনে চাপ দিলে এসি ল্যান্ড অফিসের আগের কর্মকর্তার আইডি প্রদর্শন করছে। অফিসগুলোর কানুনগো পদে নিয়োজিত কর্মকর্তারাও সংশ্লিষ্ট তথ্য যাচাই করতে চাইলে তা সম্ভব হচ্ছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেলের এক কর্মকর্তা বলেন, ভূমি সহকারী কর্মকর্তারা যে প্রস্তাবনা দেন, তা সার্ভেয়ার অথবা কানুনগোর আইডিতে প্রদর্শন করছে না। এ ধরনের অপশন না রাখার কারণে আবেদনকারীর আবেদন যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে না। নামজারির আবেদনকারী হয়তো জরুরি প্রয়োজনে জমি বিক্রির জন্য আবেদন করেন, কোনো কাগজ বাদ পড়লে তা পুনরায় সংশোধনের পদ্ধতিও রাখা হয়নি। ফলে তিনি জমি বিক্রি করতে পারছেন না। সরকারি ভূমি কর্মকর্তা প্রস্তাবনা দেওয়ার পর সরকারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো যেভাবে খতিয়ে দেখা হতো, এখন তা দেখা সম্ভব হচ্ছে না। সার্ভার জটিলতাজনিত এসব কারণে সরকারি খাসজমি বেহাত হওয়ার আশঙ্কা করেন । তাই সরকারি সম্পত্তি বেহাত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়।
সরেজমিনে সাভার ও আশুলিযা রাজস্ব সার্কেলে গিয়ে কথা হয় কয়েকটি আবাসন কম্পানির কর্মকর্তা সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভূমিসেবা সফটওয়্যার আপগ্রেডেশনের পর প্রায় ৬৩ দিন অতিক্রান্ত হলেও আমরা এখনো লগইন আইডি পাইনি। ফলে নামজারি ও খাজনা দিতে পারছি না। কম্পানির ব্যাবসায়িক কার্যক্রম থমকে পড়েছে। ’
তিনি বলেন, পুরনো সফটওয়্যারে থাকা আইডি পাসওয়ার্ডও কোনো কাজে আসছে না। পুরনো আইডিতে থাকা কয়েক শ গ্রাহকের সম্পূর্ণ তথ্য মুছে গেছে। যাদের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে সেখানে নামজারির তথ্যে প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে প্রতিনিধির নাম দেখাচ্ছে। সহকারী ভূমি কর্মকর্তারাও কোনো সমাধান দিতে পারছেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এসি ল্যান্ড অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, নতুন সফটওয়্যারের কারণে ভূমি অফিসগুলোতে একটা ‘হ য ব র ল’ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকায় তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত অসংখ্য আবাসন কম্পানি রয়েছে। পাশাপাশি পুরো বাংলাদেশে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা নামজারি ও খাজনা দিতে না পারার কারণে নতুন ফ্ল্যাট বিক্রি করতে পারছে না। পাশাপাশি ব্যাংক ঋণও পাচ্ছে না কেউ কেউ।
তিনি বলেন, নতুন সফটওয়্যার চালুর আগে কোনো পাইলট প্রজেক্ট নেওয়া হয়নি। পাশাপাশি ভূমি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে সফটওয়্যার জটিলতা ও ধীরগতির কারণে কাজ করা যাচ্ছে না। ভুক্তভোগী হচ্ছেন গ্রাহকরা। অসম্পূর্ণ সফটওয়্যার চালুর মাধ্যমে নতুন সরকারের সুনাম নষ্টের অপ্রচেষ্টা হচ্ছে কি না তা যাচাই করে দেখা উচিত।
ভোগান্তির কারণ জানতে চাইলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্পের পরিচালক মো. ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘এই ভোগান্তি অনেকটাই নিরসন হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব কোনো সার্ভার নেই, এই সার্ভার নেওয়া হয় আইসিটি মন্ত্রণালয় থেকে। আইসিটি ডিভিশনের সার্ভারের স্পিড কম হলে সেটি তারা দেখবে। আমরা তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করছি, তারা যা বলছে এর বাইরে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই।
তিনি বলেন, ‘ভূমি মন্ত্রণালয় যদি এগুলো নিয়মিত করে দেয়, তাহলে সমস্যা অনেকটাই সমাধান হয়ে যায়। এসব পদ সৃষ্টি করার কোনো ক্ষমতা প্রজেক্ট অফিসের নেই। এটি সম্পূর্ণরূপে ভূমি মন্ত্রণালয় দেখে। আমরা যত দূর জেনেছি ভূমি মন্ত্রণালয় এ বিষয়গুলো নিয়ে মিটিং করেছে, ভোগান্তি নিরসনে জেলা প্রশাসকসহ চেষ্টা করছে। এর বাইরে অন্য কোনো চেষ্টা করার সুযোগ আমাদের হাতে নেই। ’
Leave a Reply